-
এই ভিডিও এবং এর পরেরটির উদ্দেশ্য হচ্ছে
-
পৃথিবী এবং সৌরজগতের আকার সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া
-
যদিও এরপর সৌরজগৎ ছাড়িয়ে
-
গ্যালাক্সি এবং মহাবিশ্বের আকার
-
আমাদের কল্পনাকেও হার মানাবে
-
তারপরও চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই
-
যারা এখন ভিডিওটি দেখছো তাদের সবাই আশাকরি জানো
-
যে এটা হচ্ছে পৃথিবী
-
এটাই আমাদের আবাসভূমি
-
আকার সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা লাভের চেষ্টা করা যাক
-
সম্ভবত দীর্ঘতম যে আকারটির সাথে আমরা খুব ভালভাবে পরিচিত তা হচ্ছে
-
মোটামুটি ১০০ মাইল বা ১৬১ কিলোমিটার
-
একটা গাড়িতে করে এক দেড় ঘণ্টায়
-
আনুমানিক ১০০ মাইল যাওয়া যায়
-
এবং পৃথিবীর ছবিটিতে এই আকার হবে মোটামুটি 'এতোটুকু'
-
এটা হবে একটা ছোট্ট দাগের মতো
-
এই দাগটিই আনুমানিক ১০০ মাইল
-
আকার সম্পর্কে আরেকটু পরিষ্কার হতে
-
এমন একটা দ্রুতির কথা ভাবা যাক যা আমরা মোটামুটি ধারণা করতে পারি
-
যে দ্রুতি বা বেগ সম্পর্কে আমাদের বেশ ভাল আইডিয়া আছে
-
সম্ভবত একটা বুলেটের গতি এক্ষেত্রে ভাল উদাহরণ
-
হ্যা, একটা বুলেটের বেগ
-
সত্যি বলতে বুলেটের বেগ সম্পর্কেও আমাদের অতো ভাল আইডিয়া নেই
-
তারপরও ধরে নিতে পারি এটাই দ্রুততম কিছু একটা যা সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি
-
বুলেটের বেগ আনুমানিক
-
(তবে বুলেট তো অনেক রকমের হতে পারে
-
একেক রকমের বুলেটের বেগও একেক রকম হতে পারে)
-
তবে বলা যায় এর গড়পরতা দ্রুতি প্রতি সেকেন্ডে ২৮০ মিটার
-
বা প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ কিলোমিটার
-
জেট প্লেনের বেগও অনেকটা এরকম
-
বুলেটের বেগের কাছাকাছি
-
পুরো পৃথিবীর আকার সম্পর্কে ধারণা দিতে এর পরিধির দিকে নজর দেয়া যাক
-
অর্থাৎ এক জায়গা থেকে শুরু করে পুরো পৃথিবী ঘুরে আবার সে জায়গায় ফিরে আসলে যে দূরত্ব পাওয়া যাবে
-
সেই পরিধির মান হচ্ছে আনুমানিক ৪০ হাজার কিলোমিটার
-
হ্যা, ৪০,০০০ কিলোমিটার
-
সুতরাং তুমি যদি একটি বুলেট
-
বা একটি জেট প্লেনের বেগে চলতে থাকো
-
অর্থাৎ ঘণ্টায় ১০০০ কিলোমিটার বেগে
-
তাহলে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ ঘণ্টা
-
৪০ ঘণ্টায় পৃথিবী ভ্রমণ সম্ভব
-
এটা অবশ্য খুব বিস্ময়কর কিছু না
-
তোমাদের কেউ হয়তো ১২ বা ১৫ ঘণ্টা প্লেন ভ্রমণ করেছো
-
সে সময়ে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসা না গেলেও
-
বেশ অনেকটা দূরত্ব অতিক্রম করা যায়
-
হয়তো সান ফ্রানসিস্কো থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত যাওয়া যায়
-
সুতরাং এখন পর্যন্ত আকার গুলো আমাদের জন্য অতো বিস্ময়কর হয়ে উঠেনি
-
অবশ্য আমার কাছে পৃথিবীকেই অবিশ্বাস্য রকমের
-
বড় বস্তু মনে হয়
-
আচ্ছা পৃথিবীর কথা তুলে রেখে এবার
-
সূর্যের কথা ভাবা যাক
-
কারণ সূর্যের আকার আরও অনেক অনেক বড়
-
এই ছবিটি অবশ্যই সূর্যের
-
এবং আশাকরি অধিকাংশ মানুষই জানে যে সূর্য পৃথিবী থেকে "অনেক" বড়
-
এবং পৃথিবী থেকে তার দূরত্বও অনেক
-
কিন্তু আমার মনে হয় অধিকাংশ মানুষ, এমনকি আমি নিজেও
-
সূর্যের আকার বা পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের বিশালতা পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারি না
-
সুতরাং একটা ধারণা দেয়া দরকার এখনই: সূর্যের পরিধি
-
পৃথিবীর ১০৯ গুণ
-
সূর্য পরিধির দিক দিয়ে পৃথিবীর ১০৯ গুণ বড়
-
এখন সেই একই কাল্পনিক পরীক্ষাটি এখানে করা যাক
-
আগেই জেনেছি আমি যদি একটি বুলেট বা জেট প্লেনের বেগে ছুটি
-
তাহলে পুরো পৃথিবী ঘুরে আসতে সময় লাগবে ৪০ ঘণ্টা
-
তাহলে সূর্যের ক্ষেত্রে কতক্ষণ লাগবে?
-
অর্থাৎ একটি জেট প্লেনে করে যদি আমরা সূর্যকে এক চক্কর ঘুরে দেখতে চাই
-
বা কোনভাবে যদি একটি বুলেটের উপর চড়ে বসতে পারি সূর্য প্রদক্ষিণ করার জন্য
-
তাহলে সূর্যের পুরো পরিধি একবার ঘুরে আসতে
-
সময় লাগবে
-
পৃথিবীর ক্ষেত্রে যতক্ষণ লেগেছিল তার ১০৯ গুণ
-
সুতরাং প্রায় ১০০ গুণ বেশি সময় লাগবে (আমি অবশ্য ১০৯ নিতে পারতাম, কিন্তু একটা আনুমানিক হিসাব করতে চাচ্ছি)
-
এটা পৃথিবীর পরিধির প্রায় ১০০ গুণ
-
সুতরাং ১০০ গুণন ৪০ সমান ৪০০০
-
৪ হাজার ঘণ্টা!
-
এবং ৪০০০ ঘণ্টা ঠিক কত দীর্ঘ তা বুঝতে
-
আমার ক্যালকুলেটরটা বের করা যাক
-
আসল হিসাবটাই করি চলো
-
এটা পৃথিবীর পরিধির ১০৯ গুণ
-
১০৯ গুণন ৪০ ঘণ্টা
-
যেটা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে আসার সময়
-
তাহলে সূর্যের ক্ষেত্রে লাগবে ৪৩৬০ ঘণ্টা
-
যদি আমরা একটি বুলেট বা জেট প্লেনের বেগে ছুটি
-
এক দিনে আছে ২৪ ঘণ্টা যা থেকে পাওয়া যাচ্ছে
-
১৮১ দিন
-
অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক বছর লেগে যাবে
-
জেট প্লেনের বেগে সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে
-
এটা লিখে রাখি
-
অর্ধেক বছর!
-
অর্ধেক বছর...
-
সূর্য বিশাল
-
সূর্য বিশাল!
-
অবশ্য এটা দেখেই খুব বেশি বিস্মিত হবে কিনা জানি না
-
আকার সম্পর্কে আরেকটু পরিষ্কার ধারণা দেই
-
এখানে সূর্যের আরেকটা ছবি আছে
-
সূর্যের আরেকটা ছবি
-
বাকি সৌর জগৎ নিয়ে আমরা পরের ভিডিওতে কথা বলব
-
কিন্তু এখানে, এই আকারের স্কেলে সূর্য
-
অন্তত আমার কম্পিউটারের পর্দায়
-
সূর্যের ব্যাস হবে প্রায় ২০ ইঞ্চি
-
অথচ পৃথিবী এখানের এই ছোট্ট বিন্দুটি কেবল
-
একটি বৃষ্টির ফোটার চেয়েও ছোট
-
এখানের এই ছোট্ট বিন্দুটিই পৃথিবী
-
এই স্কেলে যদি পৃথিবী আঁকতে চাই যেখানে সূর্যের আকারই অনেক ছোট
-
তাহলে পৃথিবী হবে মোটামুটি এরকম
-
মাত্র এতটুকু বড়
-
এখন এটা অবশ্য অতো স্পষ্ট মনে হচ্ছে না এখনো
-
ক্লাস থ্রি বা ফোরে তো আমরা সবাই বিজ্ঞান প্রজেক্ট করেছি
-
বা সৌরজগতের এমন ছবি তোমরা অনেক সময়ই দেখে থাকো
-
কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারো না যে গ্রহগুলো আসলে অনেক দূরে অবস্থিত
-
আনুপাতিক আকার মেনে ছবিটা আঁকা হলেও
-
দেখে যতটুকু মনে হচ্ছে গ্রহগুলো সূর্য থেকে তারচেয়ে অনেক বেশি দূরে
-
পৃথিবী সূর্য থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
-
অর্থাৎ পৃথিবী
-
এই দূরত্বটুকু, সূর্য যদি এখানে হয়
-
ঠিক এখানে, তাহলে তুমি এমনকি
-
এই স্কেলে পৃথিবীকে দেখতেই পাবে না
-
সূর্য এত ছোট হলে পৃথিবীকে এখানে দেখাই সম্ভব না
-
এটা এক পিক্সেলও হবে না
-
কিন্তু দূরত্বটা হবে ১৫ কোটি
-
পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার
-
এবং ঠিক এই দূরত্বটাকেই বলা হয় এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক
-
পরের কয়েকটি ভিডিওতেও আমরা এই শব্দটা ব্যবহার করব
-
কেবল এ কারণে যে দূরত্ব নিয়ে ভাবার ক্ষেত্রে এটা বেশি সুবিধাজনক
-
এটাকে অনেক সময় সংক্ষেপে এইউ ডাকা হয়
-
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক
-
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক...
-
এবং এই দূরত্বটা ঠিক কত বড় তা বোঝাতে
-
আলোর কথা ধরা যাক, যার বেগ আমাদের কাছে মনে হয় প্রায় অসীম
-
অর্থাৎ যাকে মুহূর্তের মাঝেই অনেক দূরে চলে যেতে দেখা যায়
-
সেই আলো সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিট সময় নেয়
-
সূর্য যদি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায় তাহলে তা পৃথিবী থেকে
-
আমরা ৮ মিনিট পরে জানতে পারব
-
কিংবা এই জেট প্লেনের মাধ্যমে ব্যাপারটা বোঝাতে গেলে
-
আবার ক্যালকুলেটরটা নিয়ে আসা যাক
-
আমরা এখানে কথা বলছি ১৫
-
কোটি নিয়ে!
-
এটা ১৫ কোটি কিলোমিটার
-
আমাদের বেগ যদি হয় ঘণ্টায় ১০০০ কিলোমিটার
-
তাহলে সময় লাগবে
-
১৫০ হাজার ঘণ্টা, বুলেট বা জেট প্লেনের বেগে
-
সূর্যের কাছে পৌঁছাতে, আরও পরিষ্কার করতে
-
দিন দিয়ে হিসাব করা যাক, একদিনে আছে ২৪ ঘণ্টা
-
এটা হবে ৬২৫০ দিন, যাকে ৩৬৫ দিন দিয়ে ভাগ করলে পাই
-
প্রায় ১৭ বছর
-
সূর্যের দিকে একটা বুলেট ছুঁড়ে দিলে তা সূর্যের কাছে পৌঁছাতে ১৭ বছর সময় নেবে
-
যদি বেগের কোন পরিবর্তন না হয়
-
অর্থাৎ একটা বুলেট বা জেট প্লেন ১৭ বছরে পৃথিবী থেকে সূর্যে পৌঁছাতে পারবে
-
১৭ ...
-
১৭ বছর ...
-
কিংবা অন্যভাবে দেখলে:
-
আমার পর্দায় এই সূর্যের ছবিটার ব্যাস প্রায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি
-
সঠিক আকারে আঁকলে
-
এই ছোট্ট বিন্দু যেটা পৃথিবী
-
এই ছোট্ট বিন্দু
-
যদি দূরত্বটাও সঠিক স্কেলে আঁকি
-
তাহলে এই ছোট্ট বিন্দুকে সূর্য থেকে ৫০ ফুট দূরে স্থাপন করতে হবে
-
সূর্য থেকে ৫০-৬০ ফুট বা ১৫-১৮ মিটার দূরে
-
যদি তোমরা সৌরজগতের দিকে তাকিয়ে থাকো
-
এবং অবশ্যই সৌরজগতে আরও অনেক কিছু আছে
-
সেগুলো নিয়ে পরের ভিডিওগুলোতে কথা বলব আমরা
-
তাহলে এই বিন্দুটি তোমরা এমনকি দেখতেও পাবে না! মনে হবে কেবল এই ছোট্ট ধূলির মত জিনিসটা সূর্যের চারদিকে উড়ে বেড়াচ্ছে
-
এবং এই সৌর জগৎ থেকে আমরা যতো দূরে যাব ততোই দেখব
-
এই ছোট্ট দূরত্বটাও কিম্ভূতকিমিকার রকমের ছোট হয়ে যাচ্ছে
-
অন্যভাবে দেখলে
-
সূর্যের আকার যদি হয় এতটুকু
-
ঠিক এতটুকু
-
তাহলে এই ছোট্ট বিন্দু অর্থাৎ এই আকারের পৃথিবীটা
-
সূর্য থেকে প্রায় ২০০ ফুট বা ৬০ মিটার দূরে থাকবে
-
একটা ফুটবল মাঠের কল্পনা করতে পার
-
একটা ফুটবল মাঠের ক্ষেত্রে
-
একটা ফুটবল মাঠ এঁকেই ফেলি
-
এগুলো হচ্ছে শেষ সীমানা
-
একটা সীমানা, আরেকটা সীমানা
-
এবং তুমি যদি মেডিসিন বলের মতো আকারের কিছু একটা
-
বাস্কেট বলের চেয়ে সামান্য বড় একটা বল এক সীমান্তে রাখো
-
এই ছোট্ট বিন্দুটা হবে আনুমানিক ৬০ গজ বা ৬০ মিটার দূরে
-
ফুটবল মাঠের সাপেক্ষে এই ছোট্ট বিন্দুটা অবশ্য তোমরা দেখতেই পাবে না
-
অনেকটা এমন আকারের
-
যাই হোক, আমি এখানেই ছেড়ে দিচ্ছি তোমাদের, আশাকরি
-
এসব ভেবে তোমরা দিশেহারা হওয়া শুরু করেছ
-
পৃথিবী ও সূর্য কত বড় এবং তাদের দূরত্ব কত বিশাল
-
এরপর আমরা দেখব এই বিশাল দূরত্বগুলোও
-
বাকি সৌরজগতের সাপেক্ষে কত ছোট হয়ে যায়
-
বিশেষ করে আমরা আমরা যখন সৌরজগৎ ছাড়িয়ে আরও দূরে আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে শুরু করি