আমরা কেন ভাবি যে পুরুষ রচিত কাহিনীগুলোরই একমাত্র জাগতিক গুরুত্ব রয়েছে, এবং নারীদের গল্পগুলো নিছক মেয়েলী বলেই গণ্য করা হবে? আমার দাদীর যখন ১২ বছর বয়স তখন তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলো। তাঁর ১৪টি সন্তান ছিলো। আমার মা ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিলেন। তিনি একজন সম্পাদক ছিলেন। আমি একজন নাট্যশালা পরিচালক হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক অর্জন করেছি , এবং আমার এই অগ্রগতির জন্য সম্পূর্ণভাবে সেসব অপরিচিত মানুষদের কাছে আমি ঋণী যারা নারীর অধিকার, ভোট প্রদান, শিক্ষার অধিকার ও অগ্রগতির জন্য লড়েছেন। আর আমি এভাবেই চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, নিশ্চয়ই আপনারাও তাই। কেন নয়? (প্রশংসা ধ্বনি) তাই আমি সাত বছর পূর্বে, ওয়াও,সমগ্র বিশ্বের নারী, নামক একটি উৎসব শুরু করলাম, এবং বর্তমানে এটি পাঁচটি উপমহাদেশের ২০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একটি দেশ হলো আফ্রিকা মহাদেশের সোমালিল্যান্ড। তো আমি গত বছর সেখানে ভ্রমণে গিয়েছিলাম, এবং সেখানে গিয়ে গুহার ভেতরটা দেখা খুব উপভোগ্য ছিল। লাস গীল গুহা। তো, বিশ্বের প্রাচীনতম গুহাচিত্রের কিছু সেই গুহাগুলোয় বিদ্যমান। ধারণা করা হয় এই গুহাচিত্রগুলো আনুমানিক ৯,০০০ থেকে ১১,০০০ বছরের পুরোনো। শিল্পঃ বিবর্তনের পর থেকে মানুষ যা কিছু করে আসছে। এভাবেই আমরা নিজেদের সম্পর্কে বলি, নিজেদের পরিচয় উপলব্ধি করি, আমাদের পারিপার্শ্বিক পর্যবেক্ষণ করি, একে অপরের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি কেননা আমরা আমাদের জীবনের অর্থ বুঝতে চাই। এখানেই শিল্পের প্রয়োজনীতা। এই ছোট্ট ছবিটার দিকে একটু তাকান। আমার মনে হচ্ছে এটা একটি ছোট্ট মেয়ের ছবি। আমি ভাবলাম, মেয়েটি দেখতে কিছুটা আমার মতো যখন আমি ছোট ছিলাম। এবং চিন্তা করলাম, বাহ, এই তারুণ্যে ভরা, হাসিখুশি ছবিটি কে আঁকলো? তারপর আমি গুহার কিউরেটরকে জিজ্ঞাসা করলাম। বললাম, "যারা এইসব এঁকেছিলো সেইসব নারী ও পুরুষদের সম্পর্কে আমাকে বলুন।" এবং তিনি আমার দিকে সম্পূর্ণ বক্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, "নারীরা এইসব ছবি আঁকেনি।" এরপর আমি বললাম, "বেশ, এটা তো ১১,০০০ বছর আগের কথা।" বললাম, "আপনি কিভাবে জানলেন?" (হাসি) তিনি বললেন, "নারীরা এসব করতে পারে না। পুরুষেরা এইসব এঁকেছে। নারীরা নয়।" আসলে, আমি তেমন অবাক হইনি, কেননা এরকম আচরণ আমি ক্রমাগতভাবে দেখে এসেছি একজন নাট্যশালার পরিচালক হিসেবে সারা জীবনে। আমাদের সবসময় বলা হয় যে স্বর্গীয় জ্ঞান আসে পৌরুষের সাথে সাথে, এখন সেটি হতে পারে ইমাম, পুরোহিত, রাব্বি কিংবা পবিত্র পুরুষ ব্যক্তিত্ব। একইভাবে, আমাদের বলা হয় পৌরুষের মধ্যেই উদ্ভাবনী প্রতিভা নিহিত, বলা হয় যে পৌরুষই একমাত্র যা আমাদের পরিচয় সম্পর্কে জানাতে সক্ষম, এবং পৌরুষই জাগতিক কাহিনী বলবে আমাদের সবার পক্ষ হয়ে, যেখানে নারী শিল্পীরা আসলে শুধু কথা বলবে নারীর অভিজ্ঞতা, সমস্যাসমূহ নিয়ে যেগুলো শুধুমাত্র তাদের নিজেদের সাথেই সম্পর্কযুক্ত এবং পুরুষদের ব্যাপারে আগ্রহী হওয়া -- আর সত্যি শুধুমাত্র কিছু পুরুষদের প্রতি। এবং এটা এক ধরণের দৃঢ় বিশ্বাস, যা আমাদের শেখানো হয়, যেটা আমি মনে করি দারুনভাবে প্রতিপন্ন করে যে আমরা কি বিশ্বাস করতে সত্যি প্রস্তুত যে নারীদের গল্পও আসলে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করতে প্রস্তুত না থাকি যে নারীদের গল্পেরও গুরুত্ব রয়েছে, তাহলে নারী অধিকারের সত্যি কোন গুরুত্ব নেই, এবং সত্যিকার অর্থে কোন পরিবর্তনও ঘটবে না। আমি আপনাদেরকে গল্পের দুইটি উদাহরণ দিতে চাই যেগুলোকে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়ঃ "ই.টি." এবং "হ্যামলেট"। (হাসি) তো আমার দুই সন্তান যখন ছোট ছিলো -- ক্যারোলিনের বয়স তখন ৮ এবং রবির ৫ বছর -- আমি ওদের "ই.টি." দেখাতে নিয়ে গেলাম। সেটা ছিলো একটি ছোট্ট এলিয়েনের চমৎকার এক কাহিনী যে শেষ পর্যন্ত এক আমেরিকান পরিবারে আসে যেখানে রয়েছে মা, দুই ভাই এবং একটি বোন, কিন্তু সে তো তার বাড়িতে যেতে চায়। শুধু তাই নয়, কিছু খুব বাজে বিজ্ঞানীরা তার ওপর কিছু পরীক্ষা করতে চায়, এবং তারা ওকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। তো বাচ্চারা একটা পরিকল্পনা করলো। তারা ঠিক করলো যে তারা ওকে স্পেসশিপে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে যত দ্রুত সম্ভব, এবং ওরা ঝটপট ওকে বাইসাইকেলের ঝুড়িতে নিয়ে সাঁই সাঁই করে চালিয়ে গেলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, দুষ্টু লোকেরা এর মধ্যেই বুঝতে পেরেছে এবং তাদের পিছু নিয়েছে আর তাদের কাছে আছে সাইরেন, আছে বন্দুক, তাদের কাছে আছে বিদ্যুতিন, সব মিলিয়ে খুবই ভয়াবহ, এবং তারা প্রায় বাচ্চাদেরকে ধরেই ফেলেছে, তারা মনে হয় শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠবে না। তখন হঠাৎ, জাদুর মত, বাইকটি বাতাসে উড়াল দিলো, মেঘের ওপরে, চাঁদের ওপরে, এবং তারা এবার "ই.টি." কে বাঁচাবে। তো আমি আমার বাচ্চাদের দিকে তাকালাম, রবি তখন আহ্লাদে আটখানা, সে তখন তাদের সাথে, ই.টি. কে বাচাচ্ছে, সে তখন খুবই সুখী একটা ছেলে। এরপর আমি ক্যারোলিনের দিকে তাকালাম, সে তখন হাপুস নয়নে কাঁদছে। আমি বললাম, "কি হয়েছে?' আর সে বলল, "আমি কেন ই.টি. কে বাঁচাতে পারিনা? আমি কেন আসতে পারি না?" এরপর হঠাৎ করেই আমি বুঝতে পারলামঃ তারা কয়েকটা বাচ্চা ছিলো না; তারা ছিলো কয়েকটা ছেলে -- সবগুলো ছেলে। এবং ক্যারোলিন, যে কিনা ই.টি এর প্রতি এতো অভিভূত ছিলো, তাকে উদ্ধার কার্যে আমন্ত্রনই জানানো হয়নি, এবং সে খুবই মর্মাহত এবং অপমানিত বোধ করেছে। তো আমি স্টিভেন স্পিলবার্গকে লিখলাম -- (হাসি) (প্রশংসা ধ্বনি) বললাম, "আমি ঠিক জানিনা আপনি বুঝতে পারেন কিনা যা ঘটেছে তার মনোস্তাত্বিক গুরুত্ব, এবং আপনি কি এর চিকিৎসার বিল দিতে প্রস্তুত?" (হাসি) বিশ বছর পর, আমি তাঁর কাছ থেকে একটি শব্দও এর প্রতিউত্তরে পাইনি, কিন্তু আমি এখনো আশাবাদী। (হাসি) কিন্তু আমার মনে হলো বিষয়টা মজার, কেননা আপনারা যদি পরিদর্শন করেন উঁনি ই.টি নিয়ে কি করতে চেয়েছেন তিনি বেশ স্পষ্টভাবে বলেছেন, "আমি চেয়েছি পৃথিবী বুঝতে পারুক যে আমাদের উচিৎ ভেদাভেদকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করা।" কিন্তু যেকোন ভাবেই হোক তিনি মেয়েদের ভেদাভেদের বিষয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করেননি তাঁর চিন্তাধারায়। তিনি ভেবেছিলেন যে তিনি সমগ্র মানবতা নিয়েই গল্প লিখছেন। ক্যারোলিনের মনে হয়েছে তিনি একঘরে করেছেন মানবজাতির অর্ধভাগকে। তিনি ভেবেছিলেন তিনি মানুষের উদারতা নিয়ে গল্প লিখছেন; আর ও ভেবেছে তিনি একটি বালকের বীরোচিত অভিযান রচনা করেছেন। এবং এটা খুব সাধারণ ব্যাপার। পুরুষরা মনে করেন যে তাদের ওপরেই বৈশ্বিক যোগাযোগের দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে, কিন্তু সত্যি, তা কিভাবে হয়? পুরুষরা তাদের চোখ দিয়ে দেখা এবং তাদের লাভ করা অভিজ্ঞতা থেকে লিখছেন। আমাদেরকে অবশ্যই এসব স্বচক্ষে দেখতে হবে। আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে পিছনে ফিরে দেখার জন্য, আমাদের সকল বই, চলচ্চিত্র, সব প্রিয় জিনিসের মাধ্যমে, এখন মনে করুন, "আসলে, এটা লিখেছিলেন একজন পুরুষ শিল্পী -- শিল্পী নয়। আমাদের এটা বুঝতে হবে যে বেশিরভাগ কাহিনীগুলোই একজন পুরুষের পরিপ্রেক্ষিত থেকে লেখা হয়েছে। যাতে কোন অসুবিধা নেই, কিন্তু তারপরেও নারীদের ৫০ শতভাগ অধিকার থাকা দরকার মঞ্চ, চলচ্চিত্র, উপন্যাস, এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে। চলুন এবার "হ্যমলেট" নিয়ে কথা বলা যাক। হওয়া বা না হওয়া। সেটাই সাধারণ প্রশ্ন। কিন্তু আমার প্রশ্ন এটা নয়। আমার প্রশ্ন হলোঃ একজন তরুণী হিসেবে আমাকে কেন শেখানো হলো যে এটিই মানবীয় উভয়সঙ্কট এবং মানবীয় অভিজ্ঞতার সর্বোত্তম উদাহরণ? এটি একটি অসাধারণ গল্প, কিন্তু আসলে, এটি একটি যুবকের কাহিনী যে এই ব্যাপারে ভীত যে, একটি পুরুষতান্ত্রিক জগতে সে শক্তিশালী অবয়ব হয়ে উঠতে পারবে না যদি সে তার বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারে। বিকল্প হিসেবে আত্মহত্যার ব্যাপারটি নিয়ে সে আমাদের অনেক কিছু বলে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ওফেলিয়া হলো সেই ব্যক্তি যে সত্যি আত্মহত্যা করে, যখন সে তার মাধ্যমে অপমানিত এবং অবমাননার শিকার হয়, এখানে ওফেলিয়ার অনুভূতির ব্যাপারে পাঠকদেরকে বলার কোন সুযোগই নেই। এবং যখন ওফেলিয়ার পালা শেষ হলো, সে তার মার দিকে নজর দিলো, কেননা মূলত, তার চাচাকে ভালোবাসার দুঃসাহস তিনি দেখিয়েছিলেন এবং সঙ্গম উপভোগ করতে চেয়েছিলেন। (হাসি) এটি একটি দারুণ গল্প, কিন্তু এটি শুধু পুরুষদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সঙ্কট এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্প। কিন্তু আমাকে বলা হয়েছিলো যে এটি মানুষের গল্প, যেখানে মাত্র দুটি নারীর উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও। এবং আমি যদি পুনরায় উপলব্ধি করতে না পারি, আমি সবসময় ভাববো যে পুরুষদের গল্পের চেয়ে নারীদের গল্পকে কম প্রাধান্য দেওয়া হয়। একজন নারীর "হ্যামলেট" লিখতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা একটু ভিন্নভাবে লিখতেন, এবং সেটি কখনো বৈশ্বিক পরিচিতি পেতো না। মার্গারেট অ্যাটউড বলেছেন, "যখন একজন পুরুষ থালা-বাসন ধোয়ার কথা লেখেন, এটি বাস্তবতা। যখন একজন নারী এই কাজ করার কথা লেখেন, এটি একটি হতভাগ্য বংশগত বিধান।" (হাসি) তো, এটি শুধু তৎকালীন সময়েই বিদ্যমান ছিলো তা নয়। মানে, আমি যখন ছোট ছিলাম, আমি মরিয়া হয়ে একজন নাট্যশালা পরিচালক হতে চেয়েছিলাম, আমার পুরুষ প্রভাষক আমাকে বলেছিলেনঃ "বেশ, ব্রিটেনে তিনজন নারী পরিচালক রয়েছেন", তিনি বললেন, "জুড।" "জোয়ান নাইট, যে একজন সমকামী, তারপর জোয়ান লিটলউড, যিনি অবসরপ্রাপ্ত, এবং বাজ গুডবডি, যিনি কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছেন। তো, এই তিনজনের মধ্যে তুমি কে হতে চাও?" (হাসি) এখন, সমকামী নারীর প্রতি বিরক্তিকর নিন্দা বাদ দিলে, সত্যি বলতে, তিনি আমাকে অপমান করতে চেয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, আমার পরিচালক হতে চাওয়ার ইচ্ছেটা ছিলো হাস্যকর। এবং আমার কন্ডাক্টর বান্ধবী, মারিয়ান আসলপকে যখন এটা বললাম, সে বললো,"হ্যাঁ, আসলে আমার সঙ্গীতের শিক্ষকও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, "মেয়েরা কন্ডাক্ট করে না।" কিন্তু এতোগুলো বছর পর, আমরা আমাদের সফলতা অর্জন করেছি। আপনি ভাবছেন, "বেশ, এখন সবকিছু ভিন্ন।" সত্যি বলতে এখনও সবকিছু ভিন্ন নয়। ইদানিংকালে প্যারিস কনসার্ভেটরের বর্তমান মহাপরিচালক বলেছেন, "প্রচুর শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় একটি সিম্ফনি কন্ডাক্ট করতে, এবং নারীরা বেশ দুর্বল।" (হাসি) শিল্পী জর্জ বেসলিটস বলেছেন, "বেশ, সত্য বলতে নারীরা ছবি আঁকতে পারে না। -- তারা বেশি ভালো ছবি আঁকতে পারে না।" দুই বছর আগে লেখক ভি.এস. নাইপল বলেন, "আমি দুইটি অনুচ্ছেদ পড়ে সাথে সাথেই বলে দিতে পারি তা একজন নারীর লেখা কিনা, এবং আমি তা পড়া বন্ধ করে দিই কেননা তা আমার পড়ার যোগ্য নয়।" দর্শকঃ আরে! এবং তা এভাবেই চলতে থাকে। আমাদের একটি পথ খুঁজতে হবে যাতে তরুণী এবং নারীরা এটি ভাবা বন্ধ করেন যে তাদের কথার কোন গুরুত্ব নেই, এবং তাদের গল্প-কথক হওয়ার কোন অধিকার নেই। কেননা একবার যদি আপনি অনুভব করেন যে আপনি কেন্দ্রস্থলে এসে দাঁড়াতে পারবে না এবং বিশ্বের প্রতিনিধি হয়ে বলতে পারবেন না, আপনার মনে হবে যে আপনি ছোট এবং নির্দিষ্ট গোষ্টীকেই শুধু কিছু দিতে পারবেন। আপনি ছোট পরিসরে ছোট কাজ করতে চাইবেন, আপনার অর্থনৈতিক ক্ষমতা কমে যাবে, আপনি খুব কম দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারবেন, এবং শিল্পী হিসেবে আপনি কম সম্মানিত হবেন। এবং আমরা এই বিশ্বে অবশ্যই শিল্পীদের অসাধারণ, বিশিষ্ট স্থান দিয়ে থাকি, কেননা তাঁরাই আমাদের গল্প-কথক। এখন, আপনি যদি শিল্পী না হয়ে থাকেন তাহলে কেন এটি গুরুত্ব বহন করবে? মনে করুন আপনি একজন হিসাবরক্ষক বা উদ্যোক্তা কিংবা একজন চিকিৎসাবিদ অথবা একজন বিজ্ঞানীঃ আপনি কি নারী শিল্পীদের গুরুত্ব দেবেন? অবশ্যই, আপনাকে দিতেই হবে, কেননা আপনারা যেহেতু এই গুহা-চিত্র থেকে দেখতে পাচ্ছেন, সকল সভ্যতা, সমগ্র মনুষ্যজাতি মানুষের গল্প বলার জন্য চিত্রশিল্পীদের ওপর নির্ভর করেছে, এবং মানুষের গল্প যদি সর্বশেষে পুরুষদের দ্বারাই বলা হয়, আমার কথা বিশ্বাস করুন, সেটা হবে শুধু পুরুষদেরই গল্প। কাজেই চলুন পরিবর্তন আনি। চলুন আমাদের সকল প্রতিষ্ঠানেই পরিবর্তন আনি, শুধুমাত্র পশ্চিমেই নয়। ভুলে যাবেন না -- নারীদের উদ্ভাবনী শক্তি ধরে রাখার অসক্ষমতার এই ধারণা নাইজেরিয়া, চীন, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মেয়েদেরকেও বলা হচ্ছে। সারা বিশ্বেই, মেয়ে এবং নারীদের বলা হচ্ছে যে তারা উদ্ভাবনের এই অনুপ্রেরণা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে না। এবং আমি আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে চাইঃ আপনারা কি তা বিশ্বাস করেন? আপনারা কি বিশ্বাস করেন যে নারীরাও পারে সৃজনশীল প্রতিভাধর হতে? (সাধুবাদ এবং প্রশংসা ধ্বনি) বেশ, তাহলে অনুগ্রহ করে এগিয়ে আসুন, নারী শিল্পীদের সমর্থন দিন, তাদের শিল্পকর্ম কিনুন, জোর দিয়ে বলুন যে তাদের কথাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়, এমন মঞ্চ খুঁজে দিন যেখানে তাদের কথা অন্যরা শুনবে। এবং মনে রাখবেনঃ যে এক অর্থে, আমরা যদি বিশ্বের এই সময়কে অতিক্রম করতে চাই যেখানে আমরা জানি যে আমরা অসমকক্ষ, একমাত্র শিল্পীদেরই এই বিশ্বকে ভিন্নভাবে কল্পনা করতে হবে। এবং আমি সকল শিল্পী, নারী এবং পুরুষদেরকে আহ্বান করছি, একটি লিঙ্গ বৈষম্যহীন পৃথিবী কল্পনা করার জন্য। চলুন তা আঁকি। চলুন এতে রঙ করি। এর সম্পর্কে লিখি।এর চিত্রধারণ করি। এবং আমরা যদি তা কল্পনা করতে পারি, তাহলে আমাদের সেই শক্তি এবং উদ্যম থাকবে তার উদ্দেশ্যে আগানোর জন্য। আমি যখন এই ছোট্ট মেয়েটিকে দেখি, ১১,০০০ বছর পূর্বের, আমি জানতে চাই এখনকার একটি ছোট্ট মেয়ে পারবে সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে যে তার স্বপ্ন দেখার অধিকার রয়েছে, তার গন্তব্য নির্ধারণ করার অধিকার রয়েছে এবং সারা বিশ্বের প্রতিনিধি হয়ে তার বলার অধিকার আছে, তার জন্যে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে এবং প্রশংসিত করা হবে। ধন্যবাদ। (প্রশংসা ধ্বনি)