গত কয়েক শতাব্দী ধরে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র আমাদের জগতে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। সূক্ষ্ম বস্তু, প্রাণ এবং অবয়বসমূহের জগতটাকে আমাদের সামনে উন্মোচিত করেছে যেগুলো এতই ছোট যে খালি চোখে দেখা সম্ভব না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এর অবদান অসামান্য। আজ আমি এক নতুন ধরনের অণুবীক্ষণ যন্ত্র আপনাদের কাছে পেশ করতে চাই, পরিবর্তন দেখার অণুবীক্ষণ যন্ত্র। এটা সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মত আলোকবিদ্যা ব্যবহার করে না ছোট জিনিসকে বড় করে দেখবার জন্য, বরং তার বদলে এটি ভিডিও ক্যামেরা এবং ইমেজ প্রসেসিং ব্যবহার করে বস্তু এবং মানুষের সূক্ষ্মতম নড়াচড়া কিংবা রং এর হেরফেরকে আমাদের সামনে তুলে ধরে, যে সকল তারতম্য খালি চোখে ধরা অসম্ভব। এবং এটি আমাদেরকে একেবারে নতুন ভাবে জগতকে দেখতে দেয়। তো, রং এর হেরফের বলতে আমরা কি বুঝি? যেমন ধরুন, আমাদের চামড়ার রং এর সামান্য পরিবর্তন হয় যখন এর নীচ দিয়ে রক্ত বয়ে যায়। পরিবর্তনটা অতীব সূক্ষ্ম, একারনে, যখন আপনি অন্য একজনের দিকে তাকান, যখন পাশে বসা কারো দিকে তাকান, তাদের চামড়া বা মুখের রং এর পরিবর্তনটা আপনি দেখতে পাবেন না। স্টিভের এই ভিডিওটির দিকে তাকালে এটাকে একটি স্থির চিত্র বলে মনে হবে, কিন্তু এটাকে যখন আমাদের এই নতুন, বিশেষ দূরবীক্ষণ দিয়ে দেখি, তখন সহসাই আমরা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। এখানে যা দেখা যাচ্ছে তা হল, স্টিভের চামড়ার রঙের সূক্ষ্ম পরিবর্তন, দৃশ্যমান করার জন্য এগুলোকে ১০০ গুন বিবর্ধিত করা হয়েছে। আমরা আসলে এখানে মানুষের নাড়ীর স্পন্দন দেখতে পাচ্ছি। স্টিভের হৃদস্পন্দন কত দ্রুত চলছে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আবার একই সাথে তা র মুখমণ্ডলের রক্ত সঞ্চালনের প্রকৃত চিত্রটাও দেখতে পাচ্ছি। এবং এটা করি, কেবল নাড়ীর স্পন্দন দৃশ্যমান করার জন্য নয়, প্রকৃতপক্ষে হৃদস্পন্দনের হারকে অনুধাবন করার জন্যেও করি, এবং হৃদস্পন্দনের হার মাপার জন্যেও করি। আর সাধারন ক্যামেরা ব্যবহার করেই আমরা এটি করতে পারি এবং রোগীর শরীর স্পর্শ না করেই। সুতরাং দেখতে পাচ্ছেন, এখানে আমরা একটি নবজাতকের হৃদস্পন্দনের হার বের করেছি সাধারন একটি ডি এস এল আর ক্যামেরায় তোলা ভিডিও থেকে এবং হৃদস্পন্দনের হার যা বের করেছি তা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ করা প্রমিত পরিমাপের মত একই মাত্রায় নিখুঁত। এবং এমনকি এটি আমাদের ধারনকৃত ভিডিও না হলেও চলবে প্রকৃতপক্ষে অন্য ভিডিও দিয়েও এই কাজটি করতে পারি তাই, এখানে আমি "Batman Begins" ছবিটা থেকে একটি ক্লিপ নিয়েছি, ক্রিস্টিয়ান বেলের নাড়ীর স্পন্দন দেখাতে। (হাসির রোল) এবং আপনি হয়তো জানেন যে সে মেক-আপ নিয়ে আছে, এই আলোর কারনে কাজটি বেশ দুরূহ হয়ে যাচ্ছে, তা সত্ত্বেও, কেবল এই ভিডিও থেকেই আমরা তাঁর নাড়ীর স্পন্দন বের করেছি এবং খুব ভালোভাবেই এটা দেখাতে পারছি। বেশ, তাহলে আমরা কিভাবে এগুলো করতে পারছি? আমরা মূলতঃ আলোর হেরফের বিশ্লেষণ করছি এই ধারণকৃত ভিডিওর প্রতিটি পিক্সেলে, সময়ের সাপেক্ষে, এবং এই হেরফেরকেই একটু চাগিয়ে দিয়েছি, দেখার সুবিধার্থে এগুলোকে আমরা বড় করেছি, কঠিন বিষয়টি হল, এই সংকেতগুলোর, যে হেরফের গুলো নিয়ে আমাদের কারবার, সেগুলো খুবই সূক্ষ্ম, তাই আমাদেরকে খুবই যত্নবান হতে হবে, যখন এদেরকে আলাদা করবেন, ভিডিওগুলোতে সর্বদা-বিদ্যমান এই গোলমালের ভ্রান্তি থেকে। তাই আমরা কিছু চাতুর্য্যময় ইমেজ-প্রোসেসিং কৌশল ব্যবহার করেছি, যাতে করে, অত্যন্ত নিখুঁত পরিমাপ পাওয়া যায়, ভিডিওটির প্রতিটি পিক্সেলের রং এর, এবং সময়ের সাথে এই রং বদলানোর ধরনের, আর এরপরে আমরা এই পরিবর্তন গুলোকে বহুগুণে পরিবর্ধিত করি। এই ধরনের বর্ধিত কিংবা বিবর্ধিত ভিডিওগুলি তৈরি করার জন্য আমরা এগুলোকে আরও বড় করে তুলি, যা আসলে আমাদেরকে এই পরিবর্তনগুলো দেখায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, এভাবে শুধু রঙের সূক্ষ্ম তারতম্য দেখানোই নয়, পাশাপাশি সূক্ষ্ম নাড়াচাড়া গুলোও দেখানো যায়, আর এটা একারণেই যে, আমাদের ক্যামেরায় ধারণকৃত আলোকরশ্মি শুধু যে বস্তুর রঙের হেরফেরের ফলে পরিবর্তিত হয়, এমনটি নয়, এছাড়া বস্তুর নাড়াচাড়ার ফলেও পরিবর্তিত হয়। তাই, এটি আমার মেয়ে, যখন তার বয়স প্রায় দুই মাস। আমি প্রায় তিন বছর আগে এই ভিডিওটি ধারন করেছিলাম। এবং নতুন পিতামাতা হিসাবে আমরা চাচ্ছিলাম আমাদের বাচ্চারা সুস্থ্য থাকুক, অর্থাৎ তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে, তাঁরা জীবিত, অবশ্যই। তাই আমিও এরকম একটা বেবি-মনিটর জোগাড় করেছিলাম, যেন আমি আমার ঘুমন্ত মেয়েকে দেখতে পারি। এবং একটি গড়-পড়তা বেবি মনিটরে যা দেখতে পাবেন সেটি মোটামুটি এরকম। আপনি ঘুমন্ত শিশুটিকে দেখতে পাবেন, কিন্তু এখানে খুব বেশী কোন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে খুব বেশী কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এটা কি ভালো হতো, কিংবা আরও বার্তাবহ হতো, কিংবা আরও উপকারী হতো, যদি আমরা এভাবে দৃশ্য গুলি ওভাবে না দেখে এভাবে দেখতাম? তাই, এখানে আমি নাড়াচাড়া গুলোকে নিলাম এবং ৩০ গুন বিবর্ধিত করলাম, আর এখন স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, আমার মেয়ে নিশ্চিতভাবেই জীবিত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। (হাসির রোল) এখানে একটি পাশাপাশি তুলনামূলক চিত্র। তাই আবার, আদি ভিডিওটিতে, মূল ভিডিওটিতে, দেখার মত খুব বেশী কিছু নেই, কিন্তু এই নড়াচড়া কে বিবর্ধিত করলে তার নিশ্বাস-প্রশ্বাস অনেক বেশী দৃশ্যমান হয়। এবং দেখা যাচ্ছে, আরও অনেক ঘটনা আছে যেগুলো আমরা আমাদের এই নতুন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দৃশ্যমান ও বিবর্ধিত করতে পারি। শরীরের মধ্যে আমাদের শিরা ও ধমনী সমূহ কিভাবে স্পন্দিত হচ্ছে তা দেখতে পারছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আমাদের চোখ ক্রমাগত নড়ছে এই রকম টলোমলো ধরনের নড়াচড়া। এবং এগুলি আসলে আমারই চোখ, এবং আবার, এই ভিডিওটি আমার মেয়ের জন্মের অব্যবহিত পরে ধারনকৃত, দেখতেই পাচ্ছেন, আমি খুব একটা ঘুমাতে পারিনি। (হাসির রোল) এমনকি একজন মানুষ যখন নিথর হয়ে বসে থাকেন, তখনও আমরা সেখান থেকে প্রচুর তথ্য পেতে পারি তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন সম্পর্কে, মুখের সামান্য অভিব্যাক্তি সম্পর্কে। এসব নড়াচড়াকে ব্যবহার করে আমরা হয়তো আমাদের ভাবনা কিংবা অনুভুতি সম্পর্কে জানতে পারবো। সূক্ষ্ম যান্ত্রিক নড়াচড়াকেও আমরা বিবর্ধিত করতে পারি, যেমন ইঞ্জিন সমুহের কম্পন, যা যন্ত্রের সমস্যা গুলো চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করতে ইঞ্জিনিয়ারদেরকে সাহায্য করবে, কিংবা দালান ও স্থাপনা সমূহ বাতাসে কিভাবে কাঁপে ও বল প্রয়োগে কি প্রতিক্রিয়া করে তা দেখাবে। এই ব্যাপার গুলোকে পরিমাপ করার নানান পদ্ধতি মানব সমাজের জানা আছে, কিন্তু এই নড়াচড়াকে পরিমাপ করা এক জিনিস, আর এই নড়াচড়া গুলোকে বাস্তবে ঘটতে দেখাটা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এবং এই নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করার পর থেকেই আমরা এর কোড অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছি যেন অন্যরা এটি ব্যবহার ও পরীক্ষা করতে পারে। এটি ব্যবহার করা একেবারেই সোজা। এটি আপনার নিজের ভিডিও নিয়েও কাজ করতে পারে। এমন কি কোয়ান্টা রিসার্চ এর সহযোগীরা এই দারুন ওয়েব সাইটটি বানিয়েছেন যেখানে আপনার ভিডিওটি আপলোড করে অনলাইনেই প্রসেস করতে পারবেন তাই, এমনকি কম্পিউটার বিজ্ঞান কিংবা প্রোগ্রামিং এর কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি অবলীলায় এই অণুবীক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে পারবেন এবং আমি আপনাদেরকে গোটা দুই উদাহরন দেখাতে চাই, যে, অন্যরা এটি দিয়ে কি করেছে। দেখুন, Tamez85 নামের একজন ইউটিউব ব্যবহারকারী এই ভিডিওটা বানিয়েছেন। এই ব্যবহারকারীকে আমি জানি না, কিন্তু তিনি আমাদের কোড ব্যবহার করেছেন গর্ভকালীন পেটের সামান্য নড়াচড়াকে বিবর্ধিত করার জন্য। এটি রীতিমত রোমাঞ্চকর । (হাসির রোল) লোকজন তাদের হাতের নাড়ীর স্পন্দনকে বিবর্ধিত করার জন্য এটা ব্যবহার করেছে আর আমরা জানি যে, গিনিপিগ ব্যবহার না করা পর্যন্ত এটাকে চোস্ত বিজ্ঞান বলা যাবে না, এবং আপাতত এই গিনিপিগটিকে টিফনী নামে ডাকা হয়, এই ইউটিউব ব্যবহারকারীর দাবী, এটি বিশ্বের প্রথম ইঁদুর গোত্রীয় প্রাণী যার নড়াচড়াকে বিবর্ধিত করা হয়েছে। এটির সাহায্যে আপনিও এরকম শিল্পকর্ম বানাতে পারবেন দেখুন, ইয়েলের এক ডিজাইনের ছাত্রী এই ভিডিওটি আমার কাছে পাঠিয়েছে। সে দেখতে চেয়েছিল, কোন পার্থক্য আছে কিনা তার সহপাঠীদের নড়াচড়ার ধরণে। সে সবাইকে স্থাণুর মত দাড় করিয়ে তাদের নড়াচড়াকে বিবর্ধিত করল এটা স্থির চিত্রকে সজীব হয়ে উঠতে দেখার মত, আর এই সবগুলি উদাহরনের চমৎকার দিকটি হচ্ছে যে, এগুলি নিয়ে আমাদেরকে কিছুই করতে হয়নি। আমরা কেবল একটি নতুন উপায় যুগিয়েছি মাত্র, জগতকে দেখার একটি নতুন উপায়, আর তখন লোকজন এটাকে ব্যাবহারের আরও মজাদার, নতুন ও অভিনব সব উপায় খুঁজে বের করল। কিন্তু আমরা এখানেই থেমে যাইনি। এই যন্ত্রের সাহায্যে জগতকে শুধু নতুন ভাবে দেখা ই নয়, আমাদের সক্ষমতাকে এটি নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে আর ক্যামেরা নিয়ে করা আমাদের কর্মকাণ্ডের পরিধি অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়। তাই বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা কৌতূহলী হলাম, বস্তুজগতের আর কোন ঘটনায় সূক্ষ্ম নড়াচড়ার উৎপত্তি হয় যেগুলোকে আমরা আমাদের ক্যামেরা দিয়ে পরিমাপ করতে পারি? আর শব্দ হল সেই রকম একটি ঘটনা, যার প্রতি সম্প্রতি আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রিভুত হয়েছে। শব্দ, আমরা জানি যে, মূলতঃ এটি হচ্ছে পরিবর্তন, বাতাসের চাপের, যা বাতাসের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। এই চাপ-তরঙ্গ কোন বস্তুকে আঘাত করলে সেই বস্তুটিতে সূক্ষ্ম কম্পন তৈরি হয়, ঠিক একারণেই আমরা শব্দ শুনতে পারি এবং রেকর্ড করতে পারি। কিন্তু দেখা গেল, শব্দের দ্বারা দৃশ্যমান নড়াচড়াও তৈরি হয়। এই নড়াচড়াগুলো আমরা দেখতে পাই না কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন ক্যামেরাগুলো এই নড়াচড়া দেখতে পায়। তো, দুটো উদাহরণ দেখা যাক, এটি আমি, আমার দুর্দান্ত সংগীত প্রতিভার প্রমান দিচ্ছি। (সংগীত) (হাসির রোল) এবং গলা সাধার সময়ে আমার কণ্ঠদেশের একটি হাই-স্পীড ভিডিও ধারন করলাম। এখানেও, ভিডিওটি ভাল করে দেখলেও, আপনি খুব বেশি একটা কিছু দেখতে পাবেন না, কিন্তু যখন এর নড়াচড়াকে ১০০ গুন বিবর্ধিত করি, তখন সব নড়াচড়া ও কম্পন দৃশ্যমান হয়ে যায়, ঘাড়ে অবস্থিত এগুলো শব্দ উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত। এই ভিডিওতে এর নিদর্শন দেখা যাচ্ছে। আমরা এও জানি, অনেকে গান গেয়ে কাঁচের পানপাত্র ভাঙতে সক্ষম, যদি তিনি উপযুক্ত সুরটা ধরেন। তাই এখানে আমরা একটি সুর বাজাতে যাচ্ছি এটির কম্পাঙ্ক এই গ্লাসের অনুনাদ-কম্পাঙ্কের সমান পাশে রাখা একটি লাউড-স্পীকার থেকে আসছে। যখন সুরটা বাজালাম এবং তার কম্পনের মাত্রা ২৫০ গুন বিবর্ধিত করলাম, গ্লাসটি কিভাবে কাঁপছে তা আমরা খুব পরিস্কার ভাবেই দেখতে পাচ্ছি এবং এই শব্দের প্রতিক্রিয়ায় সেটির অনুরণন ও দেখতে পাচ্ছি। এটি এমন কিছু নয় যা আপনি হরহামেশা দেখতে পাবেন। কিন্তু এটি আমাদের ভাবনার খোরাক যুগিয়েছে। এটি আমাদেরকে এই ক্ষ্যাপাটে বুদ্ধিটা দিয়েছে। আমরা কি পুরো প্রক্রিয়াটা উল্টো দিকে চালাতে পারি এবং ভিডিও দেখে শব্দ উদ্ধার করতে পারি, শব্দ তরঙ্গের ধাক্কায় বস্তুতে উৎপন্ন সূক্ষ্ম সেই সব কম্পন বিশ্লেষণ করে? এবং মুলত যে শব্দ থেকে এই কম্পনসমুহ উৎপন্ন হয়েছিল সেই শব্দেই পুন-রূপান্তর করতে পারি? এভাবে আমরা নিত্য নৈমিত্তিক জিনিসপত্র গুলোকে এক একটা মাইক্রোফোনে পরিনত করতে পারি। এবং ঠিক এই কাজটাই আমরা করেছি। দেখুন, এখানে টেবিলের উপরে চিপসের একটি খালি প্যাকেট পরে আছে, এবং আমরা এই চিপসের প্যাকেটটিকে মাইক্রোফোনে পরিনত করতে যাচ্ছি, এটিকে ভিডিও ক্যামেরায় ধারন করে এবং শব্দ তরঙ্গের ফলে উদ্ভুত সূক্ষ্ম নড়াচড়াকে বিশ্লেষণ করে। এটি হচ্ছে সেই শব্দ যা আমরা এই ঘরের ভিতরে বাজিয়েছিলাম, (সঙ্গীতঃ "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব") এবং এটি সেই চিপসের প্যাকেটের ধারণকৃত হাইস্পিড ভিডিও। এটিকে আবারও চালাই। এই ভিডিওতে যা কিছু ঘটছে আপনার তা দেখার কোন সম্ভাবনাই নেই, যদি শুধু এটি দেখতে থাকেন, কিন্তু এখানে এই সেই শব্দ যা আমরা পুনরুদ্ধার করেছি ভিডিওটিতে লুকানো সূক্ষ্ম কম্পন বিশ্লেষণ করে। (সঙ্গীতঃ "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব") আমি এটিকে ডাকি -- ধন্যবাদ -- (করতালি) আমি এটিকে দৃষ্টিলব্ধ মাইক্রোফোন বলে ডাকি। আমরা আসলে ভিডিওর সংকেত দেখে শব্দ সংকেত বের করে আনি। এবং আপনাদেরকে এখানে এই নড়াচড়ার মাত্রা সম্পর্কে একটু ধারনা দিচ্ছি, একটি বিকট শব্দের ধাক্কাতেও চিপসের এই প্যাকেটটি এক মাইক্রোমিটারের কম নড়বে, এটি এক মিলিমিটারের হাজার ভাগের এক ভাগ। এমনই সূক্ষ্ম এই নড়াচড়া, যেগুলোকে আমরা এখন ধরতে সক্ষম হচ্ছি, বস্তুগুলো থেকে আলো কিভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে, কেবলমাত্র তা পর্যবেক্ষন এবং ক্যামেরায় ধারন করার মাধ্যমে। আমরা অন্যান্য বস্তু থেকেও শব্দ পুনরুদ্ধার করতে পারি, যেমন গাছ। (সঙ্গীতঃ "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব") এবং এমনকি আমরা কথাও পুনরুদ্ধার করতে পারি। দেখুন, ঘরের ভিতরে একজন কথা বলছেন। কন্ঠস্বরঃ মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মাইকেল রুবিনস্টেইনঃ এবং এখানে সেই পুনরুদ্ধার করা কন্ঠস্বর, স্রেফ এই চিপসের প্যাকেটের ভিডিও থেকে উদ্ধার করা। কন্ঠস্বরঃ মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মা রুঃ আমরা "মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব" ব্যবহার করেছি কারন, কথিত আছে যে এগুলোই সেই প্রথম শব্দমালা যা ১৮৭৭ সালে টমাস এডিসন তার ফনোগ্রাফ যন্ত্রে ধারন করেছিলেন। এটি ছিল ইতিহাসের প্রথম শব্দ ধারন যন্ত্রগুলির একটি। এটি মুলতঃ শব্দকে একটি ডায়াফ্রাম এর দিকে ধাবিত করতো, যেটি একটি সূঁচকে প্রকম্পিত করত যা রাংতার উপরে এই শব্দ তরঙ্গকে খোদাই করেছিল, রাংতাটি একটি বেলনের গায়ে মোড়ানো ছিল। এখানে এডিসনের ফনোগ্রাফ যন্ত্রে শব্দ ধারন এবং সেটিকে পুনরায় বাজানোর প্রদর্শনী হচ্ছে। (ভিডিও) কণ্ঠস্বরঃ টেস্টিং, টেস্টিং, ওয়ান টু থ্রি। মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। টেস্টিং, টেস্টিং, ওয়ান টু থ্রি। মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মা রুঃ আর এখন, ১৩৭ বছর পরে, আমরা প্রায় একই মানের শব্দ উদ্ধার করতে সক্ষম কিন্তু, কেবলমাত্র শব্দের কারনে বস্তুর কম্পনকে ক্যামেরার সাহায্যে পর্যবেক্ষন করে, এবং এটি করতে পারি, এমনকি যদি ক্যামেরাটি থাকে বস্তুটির থেকে ১৫ ফুট দূরে, শব্দ নিরোধক কাঁচের দেয়ালের ওপাশে। তো, এক্ষেত্রে যে শব্দমালা আমরা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি তা হল, কন্ঠস্বরঃ মেরী হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব হুজ ফ্লীচ ওয়াজ হোয়াইট এজ স্নোও এন্ড এভরিহোয়ার দ্যাট মেরী ওয়েন্ট, দ্যাট ল্যাম্ব ওয়াজ শিওর টু গোও। মা রুঃ আর হ্যাঁ, নজরদারি - এই প্রায়োগিক দিকটি ই সবার আগে আমাদের মনে উঁকি দিয়েছে। (হাসির রোল) কিন্তু অন্য অনেক ক্ষেত্রেও এটি উপযোগী হতে পারে। হয়তো আগামিতে এটিকে আমরা ব্যবহার করতে পারবো, যেমন ধরুন, শূন্যস্থানের ওপাশের শব্দকেও পুনরুদ্ধার করতে পারবো, কারন শূন্যস্থানের ভিতর দিয়ে শব্দ যেতে পারে না, কিন্তু আলো যেতে পারে। আমরা কেবল অন্বেষণ শুরু করেছি মাত্র, এই নতুন প্রযুক্তির সম্ভাব্য অন্যান্য ব্যাবহারের। এটি সেসব বস্তুগত প্রক্রিয়া দেখাচ্ছে যে গুলো আমাদের জানা অথচ সেগুলো আজ পর্যন্ত আমরা আমাদের চোখে দেখতে পারিনি। এই যে এখানে আমাদের দলটি। আজকে এখানে যা কিছু আপনাদেরকে দেখালাম তা সবই এঁদের সহযোগিতার ফল, এই যে অসাধারন ব্যক্তিবর্গকে এখানে দেখছেন, এবং আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসতে উৎসাহ দিচ্ছি আর সাদর আমন্ত্রন জানাচ্ছি, নিজে চেষ্টা করে দেখুন, এবং আমাদের সাথে যোগ দিয়ে সূক্ষ্ম নড়াচড়ার জগতটাকে উন্মোচন করুন। ধন্যবাদ। (করতালি)