আমি এটা বেশী লোককে বলিনি, কিন্ত আমার চিন্তায়, আমার আছে হাজারও গোপন পৃথিবী, তারা চলছে, সবগুলো- একই সময়ে। আমি একজন অটিস্টিকও। লোকেরা সাধারণত অটিজম কে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কিছু ছক-বাধা বৈশিষ্ট্য দিয়ে, কিন্তু বাস্তবে, আমরা বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। উদাহরণস্বরুপ, আমার ছোট ভাই, সে অতি মাত্রায় অটিজমে আক্রান্ত। সে বাকপ্রতিবন্ধী। সে কোন কথা বলতে পারে না। কিন্তু আমি কথা বলতে ভালবাসি। লোকে অনেক সময় অটিজমকে ভাবে তা কেবল অংক ও বিজ্ঞান পছন্দ করা ছাড়া আর কিছুনা কিন্তু আমি এমন অনেক অটিস্টিককে চিনি যারা সৃষ্টিশীল হতে ভালবাসে। কিন্তু তা একটি স্টেরিওটাইপ (গৎবাধা) ধারণা, কোন বিষয়ে স্টেরিওটাইপ হওয়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক নয়। উদাহরণস্বরুপ, বেশীর ভাগ লোকেই অটিজমকে "রেইন ম্যান" এর সাথে তুলনা করে এটা সাধারণত ধরে নেয়া হয় যে, প্রত্যেক অটিস্টিক ব্যক্তিই যেন ডাস্টিন হফম্যান, এটি সত্য নয়। কিন্তু এরকম শুধুই অটিস্টিকদের সাথে হয়না। দেখেছি LGBTQ দের (সমকা্মী, অন্যান্য লিঙ্গ) সাথে, নারী, POCদের(শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্য বর্ণ) সাথে এমন হয়। লোকে বৈচিত্র্যকে এত ভয় পায় যে তারা ছোট বাক্সে সব খাপে মিলাতে চায় একেবারে নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন দিয়ে। এটা আসলে এমন কিছু যা বাস্তব জীবনে আমার সাথে হয়েছিল। আমি গুগলে খুঁজি,"অটিস্টিক মানুষ.." এবং এটি দেখিয়েছিলো যেমন গুগলে টাইপ করলে দেখা যায়। আমি গুগলে খুঁজেছিলাম,"অটিস্টিক মানুষেরা.." এবং সবচেয়ে উপরে ফলাফল এল "শয়তান" লোকে প্রথমে এটিই ভাবে যখন তারা অটিজম নিয়ে ভাবে। তারা জানে। (হাসি) আমি অটিস্টিক, এ কারণে আমি যা করতে পারি- তা বরং আমার যোগ্যতা, কোন অযোগ্যতা নয় - আমার অত্যন্ত প্রখর কল্পনাশক্তি আছে। আমি একটু বিশ্লেষণ করে বলি। যেন প্রায়ই আমি দুই পৃথিবীতে হাঁটছি একটি বাস্তব জগৎ, আমরা যেখানে আছি এবং অপরটি আমার মনোজগৎ, এবং প্রায়ই আমার মনের জগৎ অনেক বেশী জীবন্ত আমার বাস্তব জগৎ অপেক্ষা। যেমন, আমি সহজেই নিজের মনে হারিয়ে যাই অটিস্টিক হবার সুবিধা হল- ছোট কোন বাক্সে আমি নিজেকে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করিনা। তোমার সেই কাজ করার কোন দৃঢ় ইচ্ছা নেই। তুমি তাই খুঁজো, যা তুমি করতে চাও, তুমি কিছু করার উপায় খুঁজে নাও , এবং তা করতে থা্কো। যদি নিজেকে কোন বাক্সের খাপেখাপে মিলাতে হত, তবে আমি এখানে থাকতাম না, যা আমার এখন আছে, তার অর্ধেক অর্জনে ব্যর্থ হতাম। যদিও কিছু সমস্যা আছে। অটিস্টিক হবার কিছু সমস্যা আছে, এবং অতি কল্পনাশক্তি থাকারও সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে সাধারণত স্কুল সমস্যা হতে পারে কিন্তু শিক্ষকের কাছে বুঝিয়ে বলাও দিনের পর দিন তাদের পাঠদান অত্যন্ত বিরক্তিকর তুমি গোপনে আশ্রয় নিচ্ছো তোমার মনোজগতে, যেখানে ঐ পাঠের কোন স্থান নেই, এটি বেশ সমস্যা তৈরি করে। (হাসি) আবার, যখন আমার কল্পনা থেমে যায়, আমার দেহ একটি নিজস্ব জীবন পায়। যখন আমার আপন জগতে উত্তেজনাকর কিছু ঘটে, আমি যেন চলতেই থাকি। আমি সামনে-পেছনে দুলতে থাকি, অথবা মাঝে মাঝে চিৎকার করি। এটি আমাকে এত শক্তি দেয় যে, আমাকে কিছু শক্তি নিঃসরণ করতে হয় । কিন্তু আমি এটা শৈশব থেকেই করে আসছি, যখন আমি একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে ছিলাম। আমার বাবা-মার কাছে তা ছিল আদরণীয়, তাই তারা ভাবেনি, কিন্তু যখন আমি স্কুলে গেলাম, তারা তা আর আদরণীয় বলে মনে করল না। কারণটি হতে পারে কেউ সেই মেয়েটির বন্ধু হতে চায় না যে পাটিগণিত ক্লাসে চিৎকার করতে শুরু করে। এবং যা সাধারণত এই সময়ে ও বয়সে ঘটে না, আবার হতে পারে কেউ অটিস্টিক একটা মেয়ের বন্ধু হতে চায় না। লোকে তাঁর সংস্পর্শে আসতে চায় না যে তাদের সাথে মিশতে পারেনা বা পারবে না স্বাভাবিক ট্যাগ করা বাক্সটির ভিতরে। কিন্তু আমি এটার সাথে মানিয়ে নিয়েছি, কারণ তা গমের খোসা থেকে গম আলাদা করার মত, আমি এভাবে খাঁটি ও সত্যিকার মানুষ খুঁজে পাই, আমি এই মানুষগুলোকে আমার বন্ধু হিসেবে পাই। কিন্তু তুমি কি ভেবেছো, স্বাভাবিক আসলে কি? এটার মানে কী? মনে কর,যদি তা হয় তোমার সবোর্চ্চ প্রশংসা "বাহ, তুমি সত্যি স্বাভাবিক একজন।" (হাসি) কিন্তু প্রশংসা হলো, "তুমি একজন ব্যতিক্রম" "তুমি প্রচলিত পথে যাওনি" তা হলো " তুমি অসাধারণ" তাই লোকে যদি এইরকম হতে চায়, তবে কেন লোকে স্বভাবিক হতে এত উদ্গ্রীব? ব্যক্তির উজ্জ্বল স্বতন্ত্র আলোকে নির্দিষ্ট করা কেন ? লোকে বৈচিত্র্য এত ভয় পায় যে তারা সবাইকে বাধ্য করে, এমনকি তাদেরকেও, যারা স্বাভাবিক হতে চায় না বা পারে না কিছু প্রতিষ্ঠান আছে LGBTQ দের জন্য বা অটিস্টিকদের জন্য, তাদের স্বাভাবিকে রুপান্তর করতে এখন লোকে এভাবে স্বাভাবিক হতে চেষ্টাও করে- যা হতাশাজনক। সব মিলিয়ে, আমি আমার অটিজম ও আমার কল্পনা নিয়ে বাণিজ্য করব না । আমি অটিস্টিক, কিন্তু- আমি BBC তে তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেছি, আমি একটি বই লিখছি, আমি এখানে কথা বলছি- এটা অসাধারণ- এবং আমি যা পেয়েছি তার মধ্যে অন্যতম হলো, আমি মনে করি আমি পেয়েছি, আমি যোগাযোগের উপায় খুঁজে পেয়েছি আমার ছোট ভাই-বোনের সাথে, যারা বাকপ্রতিবন্ধী। তারা কথা বলতে পারেনা। লোকে বাকপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে লিখতে চায় না কিন্তু এটা বোকামি, কারণ আমার ছোট ভাইবোন হলো শ্রেষ্ঠ ভাইবোন, যা একজন আশা করতে পারে। তারা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আমি তাদের ভালবাসি এবং তাদের অন্য সবকিছুর চেয়ে বেশী যত্ন করি। তোমাদের কাছে একটি প্রশ্ন রেখে যাচ্ছিঃ আমরা যদি কারো মনের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারি, সে অটিস্টিক হোক বা না হোক, কাউকে স্বাভাবিক হতে না পারার জন্য শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে, অনন্য হতে পারাকে উদযাপন করি না কেন তাকে উৎসাহ দেই না কেন, যে তার কল্পনাকে অবাধ করে দেয়? ধন্যবাদ। (করতালি)