বর্তমানে আমি একজন পর্যটন সংগঠক ও শান্তি-নির্মাতা, কিন্তু আমি শুরু করেছিলাম অন্যভাবে। যখন আমি বছর সাতেকের ছিলাম, মনে আছে দূরদর্শনে একদিন দেখলাম লোকে পাথর ছুঁঁড়ছে, মনে হয়েছিল এটা বুঝি খুব মজার ব্যাপার । সুতরাং আমিও রাস্তায় নেমে পাথর ছোঁড়া শুরু করলাম, এটা না বুঝেই, যে পাথরগুলি ইজরায়েলিদের গাড়ির ওপর ছোঁড়ার কথা। তার বদলে, আমি আমার পড়শির গাড়িতে আঘাত করলাম।(সমবেত হাসি) বলা বাহূল্য আমার এমন দেশপ্রেমে তাঁরা খুশী হলেন না। এটি আমার ভাইয়ের সাথে আমার ছবি এই ছোট ছেলেটি আমি, জানি আপনারা কী ভাবছেনঃ "বেশ তো মিষ্টি দেখতে ছিলে, তোমার এমন দশা হল কীভাবে? কিন্তু আমার ভাই, যে আমার থেকে বড়, আঠারো বছর বয়সে কারাদন্ড পায়, পাথর ছোঁড়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে। সে পাথর ছুঁড়েছে তা স্বীকার করতে অসম্মত হওয়ায় তাকে মারধর করা হয়। ফলে সে গুরুতরভাবে আহত হয়, ও কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু ঘটে। আমি তখন ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ, প্রতিশোধের জন্য মরিয়া কিন্তু এই অস্থিরতা কমে এল আমি যখন প্রায় আঠারো। আমার মনে হল যে কর্মসংস্থানের জন্য হিব্রু ভাষাটি জানা দরকার এবং হিব্রু পড়তে গিয়ে প্রথম পরিচিত হলাম এমন ইহুদিদের সাথে যাঁরা সৈনিক নন। তাঁদের সাথে আমার সখ্যতা হল ছোটখাট ব্যাপারের মধ্যে দিয়ে, যেমন পল্লীগীতি, প্যালেস্তানিয়দের জন্য যেটা বেশ বিচিত্র এক ব্যাপার। অবশ্য এই সময়েই আমি এটাও উপলব্ধি করি যে আমাদের মাঝে আছে ক্রোধের দেওয়াল, ঘৃনা ও অজ্ঞতার দেওয়াল, যা আমাদের আলাদা করে রেখেছে। বুঝলাম জীবনে কী ঘটল তা তেমন গুরুত্বপূর্ন নয়। যা গুরুত্বপূর্ন, তা হল আমার প্রতিক্রিয়া। সুতরাং, আমি ঠিক করলাম আমার জীবন নিয়োজিত করব এই বিভেদের দেওয়ালগুলি ভাঙ্গতে। এই কাজটি আমি বিভিন্ন ভাবে করি । পর্যটন এগুলির মধ্যে একটি, তাছাড়া আছে গনমাধ্যম ও শিক্ষা। হয়ত ভাবছেন, পর্যটন কীভাবে পরিবর্তন আনবে? এতে কি দেওয়াল ভাঙ্গবে? হ্যাঁ। পর্যটন সেরা অনুমোদনযোগ্য উপায় এ দেওয়াল ভাঙ্গার ও একে অন্যের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করার ও মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন করার। ২০০৯ সালে আমি মেজদি ট্যুরসের সহপ্রতিষ্ঠাতা হই, এমন এক উদ্যোগ যার লক্ষ্য হল সামাজিক মেলবনন্ধন। দুজন ইহুদি বন্ধুর সাথে শুরু করি এটি, আর আমরা যা করি, যা করেছিলাম, ধরুন জেরুসালেমে, থাকবেন দুজন ভ্রমন সঙ্গী, একজন হবেন প্যালেস্তনীয়, অন্যজন ইজরায়েলী, যাঁরা সফর নির্দেশনা করবেন একসাথে, কথা বলবেন ইতিহাস ও কাহিনি, স্থপতি ও বিবাদের, সম্পূর্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। আমি একবার কবি নামে এক বন্ধুর সাথে একটি সফর আয়োজন করেছিলাম শিকাগোর এক দল ইহুদি পর্যটকদের নিয়ে, জেরুসালেমে... তাঁদের নিয়ে একটি প্যালেস্তানীয় উদ্বাস্তু শিবিরে গেলাম, আর সেখানে আমরা সবাই মিলে খেলাম দারুন এক খাবার। যাইহোক, ইনি আমার মা। ভীষন জমাটি মানুষ। আর এইটি হল মকলুবা, একটি প্যালেস্তানীয় খাবার। নামটির মানে হল 'উল্টো।' এটি ভাত ও মুরগীর মাংসের পদ, এবং এটি তৈরী করে উলটে দিতে হয়। এটি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু পদ। এটি সকলে একসাথে খাওয়া হবে। তারপর ইজরায়েলী ও প্যালেস্তানীয় যৌথ সংগীত-দলের গান হল, আর সাথে হল বেলি ডান্স। আপনারা যদি বেলি ডান্স না জেনে থাকেন, আমি না হয় পরে শিখিয়ে দেব। যখন যাওয়ার সময় হল, দুপক্ষই কাঁদতে লাগল, কারন কারোরই এই মজলিশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না। তিন বছর পরেও সেই আত্মীয়তা রয়ে গেছে। ভাবুন তো, যদি এক কোটি মানুষ যাঁরা প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ভ্রমন করেন, তাঁদের শুধুমাত্র বাসে করে এক দিক থেকে অন্যদিকে না নিয়ে গিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে না নিয়ে গিয়ে, শুধু বাসের জানলা দিয়ে লোকজন বা জায়গার ছবি না তুলে যদি প্রকৃত অর্থে লোকের সাথে মেলামেশা করানো যেত। জানেন, আমার মনে আছে ইউ কে থেকে আসা একটি মুসলমান দলের কথা যাঁরা গিয়েছিলেন এক কট্টর ইহুদি পরিবারে আর একসাথে করেছিলেন তাঁদের শুক্রুবারের পবিত্র সান্ধ্যভোজন, তাঁরা একসাথে খেয়েছিলেন হামিন, একটি ইহুদি পদ, এক ধরনের ঝোল, এবং তাঁরা ক্রমে উপলব্ধি করলেন, যে একশ বছর আগে, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা উত্তর আফ্রিকার একই জায়গা থেকে এসেছিলেন। এটি আপনার ফেসবুকের ছবির পাতা নয়। এটি দুর্যোগ পর্যটন নয়। এটি পর্যটনের ভবিষ্যত, আমি আপনাকে নিমন্ত্রন করছি ভ্রমনের ধারনা পাল্টাতে। এটি আমরা সারা বিশ্ব জুড়ে করতে শুরু করেছি, আয়ারল্যান্ড থেকে ইরান থেকে তুর্কি, সমাজ পাল্টানোর জন্য আমা্দের যেখানে যেতে হবে, সেখানেই যাব। ধন্যবাদ (করতালি)