১৯শ শতকের কলম্বিয়ান কবি হোসে মানুয়েল মারোকিন'এর কবিতা 'লা সেরেনাতা'-র প্রথম কয়েকটি লাইনের আবৃত্তি এটাই হচ্ছে কলম্বিয়ান সাহিত্যের উদাহরণ। আমি নিশ্চিত খুব কম লোকেরই এটি মনে আছে। কলম্বিয়া, ৬ মার্চ ১৯২৭। এক মফস্বল শহরের চারিপাশের কলা ক্ষেতগুলোর উপর বৃষ্টি পড়ছে মুষলধারে শহরের নাম আরাকাতাকা সেদিন, অতলান্তিক এবং গ্রীষ্মমন্ডলের মিশ্র চিহ্নের নীচে জন্মগ্রহণ করেন... ...গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। ৫৫ বছর পর এই লেখককে নোবেল সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয় - তার রচিত একটি মাস্টারপিস গোটা বিশ্ব পরিভ্রমণ করেছে। প্রাগৈতিহাসিক কালের ডিমের মতো সাদা, প্রকান্ড আর মসৃণ সব পাথরের একটা প্রান্তরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাকচক্ষু জলের এক নদী, তারই তীরে রোদে শুকানো ইটের তৈরি কুড়িটি বাড়ির এক গ্রাম তখন মাকোন্দো। জগৎ এমনই আনকোরা যে মেলা জিনিসেরই নেই কোনো নাম, ওগুলো দেখাতে হলে আঙুল তাক করে বুঝিয়ে দিতে হয়। ফি-বছর মার্চ মাসে টুটা ফাটা জামা কাপড় পরা উস্কো খুস্কো চেহারার এক দল জিপসি এসে তাঁবু খাটায় গ্রামের কাছে, বাঁশী আর খোল করতালের তুমুল হল্লা তুলে দেখিয়ে বেড়ায় নিত্য নতুন যতো আবিষ্কার। জন্মের পর থেকেই আমি জানতাম যে আমি লেখক হবো। আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম, লেখক হবার জন্যে যে বাসনা, ইচ্ছাশক্তি, মনোবল - সবই আমার ছিল। আমি সব সময়ই লিখতাম। কখনো ভাবিনি যে আমাকে দিয়ে আর কোন কাজ সম্ভব.. ..কখনো ভাবিনি যে লেখালেখির পেশা থেকে কোনদিন আয় উপার্জন করতে পারবো.. কিন্তু লেখক হতে গিয়ে যদি না খেয়েও মরতে হয়, আমি তার জন্যেও প্রস্তুত ছিলাম। দৃঢ়সংকল্প এই লেখক, যিনি সাহিত্য রচনার জন্যে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি ছিলেন, 'শতবর্ষের নি:সঙ্গতা' লিখে তিনি এক নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করেন। মাকোন্দো - ক্যারিবীয় সাগরের উপকূলে এক ছোট শহর... ...এবং একটি গোটা মহাদেশ। (কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের দৃশ্য) কিন্তু সেই পৃথিবীর সূচনালগ্নে কি ছিল? এমন এক উপন্যাস যার ঘটনাগুলো সত্য অথচ পড়ে মনে হয় স্বপ্নের মতো, এমন এক ভয়াল কাহিনী যেটি পড়ে আমরা আতঙ্কিত হইনা, যে গল্পে শিশুও হয়ে যায় যাদুকর? wth? একদম শুরুতে ছিলেন একজন মাতামহ - নিকোলাস মার্কেস, কর্নেল। ২০শ শতাব্দীর শুরুতে সম্ভ্রান্ত পরিবারের এই সন্তান যোগ দেন গৃহযুদ্ধে - 'হাজার দিনের যুদ্ধ' নামে পরিচিত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। কর্নেলের এক প্রিয় বন্ধু ছিল - যুদ্ধের ময়দানে তার বিশ্বস্ত সঙ্গী মেদার্দো পাচেকো। কিন্তু ১৯০৮ সালের অক্টোবর মাসের এক অলক্ষুণে দিনে কর্নেল মার্কেস এবং পাচেকো একে অপরের সাথে ডুয়েল লড়েন। মান-সম্মানের প্রশ্ন ছিল। কর্নেলের হাতে নিহত হন পাচেকো কিন্তু কর্নেল যেন নিজেকেই হত্যা করে ফেললেন। সীমাহীন বেদনায় জর্জরিত কর্নেল আপন শহর পরিত্যাগ করলেন চলে গেলেন সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালার অপর পারে এক নাম-না-জানা গ্রামে। কুড়ি বছর অতিবাহিত হয় কর্নেলের একটি কন্যা সন্তান হয়, লুইসা - তার চোখের মনি গ্রামের টেলিগ্রাফ অপারেটরের প্রেমে পাগল সে। কর্নেল এবং তার স্ত্রী ত্রাংকিলিনা এই সম্পর্কের ঘোর বিরোধী। তবু অবশেষে প্রেমিক-প্রেমিকার পরিণয় হয় লুইসা তার প্রথম পুত্র সন্তানের নাম রাখেন গাব্রিয়েল নানা নানীর জিম্মায় দিয়ে দেন ছেলেকে, যেন বাবার সাথে বেয়াদবীর পর মিটমাট করতে চাইছেন। তাই আট বছর বয়স পর্যন্ত গার্সিয়া মার্কেস তার নানা নানীর সাথে আরাকাতাকায় বসবাস করেছিলেন নানা-নানী আর সেই বাড়িতে আসা যাওয়া করা অগুণতি মহিলারা বালক গাব্রিয়েলের কাছে পৃথিবীর বর্ণনা দিতেন